গোর্কী । লেনিন । রবীন্দ্রনাথ । বঙ্কিমচন্দ্র । অন্যান্য ভারতীয় মানীষী । অন্যান্য বিদেশী মনীষী
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(বাঙ্গলার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন)
·
“যশের
জন্য লিখিবেন না। তাহা হইলে যশ হইবে না, লেখাও ভালো হইবে না। লেখা ভালো হইলে যশ
আপনি আসিবে।”
·
“টাকার
জন্য লিখিবেন না। ... এখন অর্থের উদ্দেশ্যে লিখিতে গেলে, লোকরঞ্জন প্রবৃত্তি প্রবল
হইয়া পড়ে। এখন আমাদিগের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করিয়া লোকরঞ্জন
করিতে গেলে রচনা বিকৃত ও অনিষ্টকর হইয়া উঠে।”
·
“যদি
মনে এমন বুঝিতে পারেন যে, লিখিয়া দেশের বা মনুষ্যজাতির কিছু মঙ্গল সাধন করিতে
পারেন, অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন।
·
“যাহা
অসত্য, ধর্মবিরুদ্ধ, পরনিন্দা বা পরপীড়ন বা স্বার্থ সাধন যাহার উদ্দেশ্য, সে সকল
প্রবন্ধ কখনও হিতকর হইতে পারেনা, সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য্য। সত্য ও ধর্ম্মই
সাহিত্যের উদ্দেশ্য। অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ।”
·
“যাহা
লিখিবেন তাহা হঠাৎ ছাপাইবেন না। কিছুকাল ফেলিয়া রাখিবেন। কিছুকাল পরে উহা সংশোধন
করিবেন। তাহা হইলে দেখিবেন, প্রবন্ধে অনেক দোষ আছে। কাব্য নাটক উপন্যাস দুই এক
বৎসর ফেলিয়া রাখিয়া তারপর সংশোধন করিলে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে। যাহারা সাময়িক
সাহিত্যের কাজে ব্রতী, তাঁহাদের পক্ষে এই নিয়ম রক্ষাটি ঘটিয়া উঠে না। এজন্য সাময়িক
সাহিত্য লেখকের পক্ষে অবনতিকর।”
·
“যে
বিষয়ে যাহার অধিকার নাই, সে বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপণ অকর্ত্তব্য। এটি সোজা কথা,
কিন্তু সাময়িক সাহিত্যতে এ নিয়মটি রক্ষিত হয় না”।
·
“বিদ্যা
প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না। বিদ্যা থাকিলে তাহা আপনিই প্রকাশ পায়, চেষ্টা করিতে হয়
না। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর। এবং রচনার পারিপাট্যের বিশেষ
হানিজনক। এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি, সংস্কৃত, ফরাশি, জার্ম্মান কোটেশন বড় বেশী
দেখিতে পাই। যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে ভাষা হইতে কদাচ
উদ্ধৃত করিবেন না।”
·
“অলঙ্কার
প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত হইবে না। স্থানে স্থানে অলঙ্কার বা ব্যঙ্গের
প্রয়োজন হয় বটে; লেখকের ভাণ্ডারে এ সামগ্রী থাকিলে, প্রয়োজন মতে আপনি আসিয়া
পৌঁছিবে— ভাণ্ডারে না থাকিলে
মাথা কুটিলেও আসিবে না। অসময়ে বা শূণ্য ভাণ্ডারে অলঙ্কার প্রয়োগের বা রসিকতার
চেষ্টার মত কদর্য্য আর কিছুই নাই।”
·
“যে
স্থানে অলঙ্কার বা ব্যঙ্গ বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হইবে, সেই স্থানটি কাটিয়া দিবে, এটি
প্রাচীন বিধি। আমি সে কথা বলি না। কিন্তু আমার পরামর্শ এই যে, সে স্থানটি
বন্ধুবর্গকে পুনঃ পুনঃ পড়িয়া শুনাইবে। যদি ভালো না হইয়া থাকে, তবে দুই চারি বার
পড়িলে লেখকের নিজেরই আর উহা ভালো লাগিবে না— বন্ধুবর্গের নিকট পড়িতে লজ্জা করিবে। তখন উহা কাটিয়া দিবে।”
·
“সকল
অলঙ্কারের শ্রেষ্ট অলঙ্কার সরলতা। যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে পাঠককে
বুঝাইতে পারেন, তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক। কেন না, লেখার
উদ্দেশ্য পাঠককে বুঝান।”
·
“কাহারও
অনুকরণ করিও না। অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হয় না। অমুক ইংরাজী বা
সংস্কৃত বা বাঙ্গলা লেখক এইরূপ লিখিয়াছেন, আমিও এরূপ লিখিব, এ কথা কদাপি মনে স্থান
দিও না।”
·
“যে
কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও না। প্রমাণগুলি প্রযুক্ত করা সকল সময়ে
প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হাতে থাকা চাই।”
“বাঙ্গলা সাহিত্য, বাঙ্গলার ভরসা। এই নিয়মগুলি বাঙ্গলা লেখকদিগের দ্বারা রক্ষিত হইলে, বাঙ্গলা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হইতে থাকিবে।”
“বাঙ্গলা সাহিত্য, বাঙ্গলার ভরসা। এই নিয়মগুলি বাঙ্গলা লেখকদিগের দ্বারা রক্ষিত হইলে, বাঙ্গলা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হইতে থাকিবে।”
No comments:
Post a Comment