নতুন সংস্কৃতি - সাহিত্য বিভাগ

 প্রকাশিত পত্রিকা | অন্যান্য



     নতুন সংস্কৃতি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম। শিল্প-সাহিত্য-সংগীতের মধ্য দিয়ে জনমানসে মানবিকতা ও সুস্থতার সুপ্রভাবসৃষ্টিই এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৫ সাল অবধি ছিল এর বিস্তৃতি; যদিও এর পরেও স্বল্প কিছুকাল নতুন সংস্কৃতি তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল। গ্রাম-শহরের কিছু অনামি লেখককে নিয়ে পথ চলা শুরু করলেও অনেক প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকই তাঁদের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন এক নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে।
তাঁদের কথায় সম্পর্কবিহীন মনুষ্যত্ব একাকীত্বের দূর্গে অন্তরীন। খণ্ড, ছিন্ন, অসম্পূর্ণ জীবন ব্যক্তিত্বহীন বিস্বাদ জড়ত্বে পঙ্গু হতে থাকে। ক্রমাগত হিমনিমজ্জমানতায় তার মৃত্যু। নতুন সংস্কৃতির সংগ্রাম সেই মৃত্যুর বিরুদ্ধে।
কিন্তু যে-সমাজ অপরের মুখ ম্লান করে নিজের মুখ উজ্জ্বল করার মন্ত্র শেখায় মানবিকতার মৃত্যুবাণও তার স্বকীয় সত্তায় নিহিত। হয়তো সংস্কৃতিই পারে সেই মারের হাত থেকে জীবনকে, সমাজকে অনেকাংশে বাঁচিয়ে তুলতে। একদিকে যেমন প্রয়োজন অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যবিধান, অন্যদিকে চাই অপসংস্কৃতির সংস্কারসাধন ও নতুন মূল্যের প্রতিষ্ঠা। ......
...... গ্রামের আছে যাত্রা, ভাদু, টুসু, মনসার ভাসান, সুবচনী, সিন্নী আর ব্রতকথা; নগরের রুচিদীপ্র শিল্প, সাহিত্য আর চলচ্চিত্রের তীব্র বর্ণাঢ্যতা। গ্রাম আর শহর দুটি ভিন্ন মেরু : দৈন্যের সংকোচ আর উন্নাসিক অহমিকায় ব্যবধানের উত্তুঙ্গ হিমশৈল। গ্রামীণ মানসিকতায়, নাগরিক মানসিকতায় সুদুস্তর দূরত্ব।
“—আর এই সুযোগে পণ্য-সংস্কৃতির কুশলী অনুপ্রবেশ আজ মনুষ্যত্বের গোটা ঐতিহ্যকে নিমজ্জিত করেছে অবিশ্বাস্য নীতিহীনতায়। তাই ...... নিরন্তর সংগ্রাম করতে হবে সেই নীতিহীনতার বিরুদ্ধে নীতি প্রতিষ্ঠা, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে নতুন সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
ইতিহাসই বলবে নতুন সংস্কৃতি জনমানসে কতটা প্রভাব ফেলেছিল; কিন্তু দুঃখের কথা হল আজ অবধি নতুন সংস্কৃতির সঠিক মূল্যায়ন কেউ করেন নি, যদিও তাঁরা বলতে চেয়েছিলেন:
                        জীবনে জীবন যোগ করা
                          না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পশরা

No comments:

Post a Comment