অরুণাচলকে লেখা সুকান্তর চিঠি । সুকান্তকে লেখা অরুণাচলের চিঠি । অরুণাচলকে লেখা অন্যদের চিঠি । অন্যদেরকে লেখা অরুণাচলের চিঠি
চিঠিপত্র হ’ল সময়ের দর্পণে দেখা ঐতিহাসিক দলিল; আর তা যখন
অরুণাচল বসু বা সুকান্ত ভট্টাচার্যর মতন বিদগ্ধ মানুষের কলম থেকে বের হয়, তখন তা
অমূল্য হয়ে ওঠে। এখানে দেওয়া সুকান্ত ভট্টাচার্যর চিঠিগুলি ‘সুকান্ত সমগ্র’ মারফৎ বহুল পরিচিত; কিন্তু তা যদি তাঁর নিজের হাতের লেখায় দেখা যায় এবং সাথে
সাথে অরুণাচলের লেখাও ক্রমান্বয়ে পাওয়া যায়, তখন যেন অনেক কিছু পাওয়া হয়ে যায়
একসাথে। তাঁদের যেমন ভাষার খেলা চলত, তেমনই চলত পরস্পরকে বিভিন্ন কৌতুককর সম্বোধনে
ভূষিত করা। যেমন— সুকান্ত লিখলেন ‘পরম হাস্যাস্পদ, অরুণ’, এর জবাবে অরুণাচল চিঠির শেষে নিজের নাম লিখলেন ‘শ্রী হাস্যাস্পদ বসু’। আবার কিছুদিন চিঠি না পেয়ে সুকান্ত ‘সবুরে মেওয়া ফল – দাতাসু’ সম্বোধন করে অরুণাচলকে লিখলেন। এছাড়া, ‘প্রভূত-আনন্দ-দায়কেসু’, ‘আশানুরূপেসু’, প্রভৃতি নানান সম্বোধনে অরুণাচলকে ভূষিত করেছেন
সুকান্ত। অপর দিকে সুকান্তকে অরুণাচল সম্বোধন করেছেন ‘তারিণী’, ‘সখারাম দাশ’, ‘উপক্রামক’ (উপক্রমণিকার সঙ্গে সম্পর্কের
কারণে), প্রভৃতি এবং চিঠির শেষে লিখেছেন ‘দীনবন্ধু’, ‘দুর্ভাগা’ বা
‘একটু ঝগড়া পাঠালাম— ইতি— শ্রী জ্ঞানেশ্বর তালুকদার’। অরুণাচল সৎসঙ্গ আশ্রমে থাকাকালীন (তখন তাঁর নাম ছিল অর্ণব স্বামী) তাঁকে ব্যঙ্গ
করে সুকান্ত লিখেছিলেন ‘শ্রীশ্রীশ্রী ১০৮
অর্ণব স্বামী গুরুজী মহারাজ সমীপেষু, শত শত সেলাম পূর্বক নিবেদন’। অন্যদিকে অরুণাচল ‘রবীন্দ্রাব্দ’ লেখা শুরু করলেন (রবীন্দ্রনাথের জন্ম সাল ১২৬৮ থেকে শুরু) এবং দুটি চিঠিতে এর
উল্লেখও পাওয়া যায়।
শ্যালিকা নীলিমা ঘোষালকে
লেখা অরুণাচলের চিঠিতে আমরা পাই কবিতার মাধ্যমে অদ্ভুত সুন্দরভাবে বর্ণনা করা
তৎকালীন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির এক চিত্র। এছাড়াও অন্যান্যদের কাছে লেখা চিঠি তাঁর
বাগ্মিতার পরিচয় বহন করে। বিভিন্ন গুণী মানুষের সংস্পর্শে আসার কারণে তাঁদের সঙ্গে
অরুণাচলের পত্রালাপ চলত স্বাভাবিক ভাবেই; তার মাত্র সামান্য কয়েকটিই ইতিহাসের
স্বার্থে এখানে দেওয়া সম্ভব হ’ল। এই
চিঠিগুলির সাহায্যে তখনকার পরিবেশ, পরিস্থিতি, রাজনীতি, সখ্যতা ও তাঁর লেখা সংক্রান্ত
অনেক কথাই বোঝা সম্ভবপর হবে।
No comments:
Post a Comment