টিপ্পনী



কৈফিয়ত

কবি অরুণাচল বসু এক অবিস্মরণীয় গীতি কবি, যিনি কাউকে অনুসরণ করেন নি। তিনি ছিলেন এক বিক্ষুব্ধ সময়ের কবি; দেশ ভাগ, দাঙ্গা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়কার কবি। সুকান্তর ঘনিষ্টতম বন্ধু হলেও তাঁর কবিতা সুকান্তর থেকে সুরে, শব্দে ও চিত্রে আশ্চর্য পৃথক। সেই অরুণাচল বসু যাতে জনমানস থেকে হারিয়ে না যান, তাই ব্যক্তিগত উদ্দোগে এই ব্লগের সৃষ্টি। যেহেতু ব্লগটি অসম্পাদিত, কোথাও কোন ভুলত্রুটি থাকলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এ ব্যাপারে কেউ আলোকপাত করলে তা কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করা হবে।


সংশোধনী

১) জন্ম: কিছু কিছু রচনায়, বইয়ে এবং পত্রিকায় অরুনাচল বসুর জন্মসাল বাংলার ১৩৩১ বা ইংরাজীর ১৯২৪ লেখা থাকলেও তা ঠিক নয়। বিভিন্ন নথি এবং তাঁর মা সরলা বসুর লেখা থেকে জানা যায় যে অরুণাচল বসুর জন্মসাল বাংলার ১৩৩০ বা ইংরাজীর ১৯২৩ সালে।
২) অরুণাচল বসুর সংকলিত কবিতাএই বইয়ের ১৩১ পৃষ্ঠার ঘুম ঘুম নিঃঝুম রাত্রি গানটির সুর ও কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলে উল্লেখ করা আছে, কিন্তু সাহারা চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন শ্রী খগেন দাশগুপ্ত। ঐ চলচ্চিত্রে অরুণাচল বসুর কথায় উৎপলা সেনের কণ্ঠে একটি বা দুটি গান আছে (একটি গান হঘুম কুমারি)। সম্ভবতঃ সাহারা মুক্তি পায় ১৯৪৭ সালে; আর একটি নথিতে দেখা যাচ্ছে ঘুম ঘুম নিঃঝুম রাত্রি গানটি রেকর্ড হয় ১৯৫০ সালে। কারো কাছে বিশদ তথ্য থাকলে তা কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করা হবে।
৩) ছবি: সময়ের চিত্রমালা অরুণাচল বসুর কবিতা (শারদীয় নতুন কবিসম্মেলন ২০১৩ পৃষ্ঠা ১৭২) এবং অরুণাচল বসু : কিছু স্মৃতি, কিছু কথা (শারদীয় নতুন কবিসম্মেলন ২০১৫ পৃষ্ঠা ৩০১) রচনাদুটিতে মাইক্রোফোনের সামনে অরুণাচলের ছবির পরিচিতি ভুল লেখা আছে। ঐ ছবিটা তোলা হয়েছিল ২২ ডিসেম্বর ১৯৭৪-এ কবি সুকান্ত মূল্যায়ন অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের সময়।
৪) অরুণাচল বসু : কিছু স্মৃতি, কিছু কথা: অজ্ঞানতাবশত এই রচনাটিতে কিছু ভুল রয়ে গেছে; পরবর্তীকালে এই ব্লগ তৈরীর সময় আরো অনেক তথ্য সংগৃহীত হয়েছে এবং এর ফলে সেই ভুলগুলো সংশোধন করা সম্ভব হi) পৃষ্ঠা ৩০২ অরুণাচল-সুকান্তর যুগ্ম রচনা শতাব্দী কবিতাটি ষোলো লাইনের বলে উল্লিখিত আছে (মুখর পত্রিকার ১০ পৃষ্ঠাতেও একই কথা উল্লেখ আছে)। কবিতাটি হাতে আসায় দেখা যাচ্ছে যে, এটি চব্বিশ লাইনের। ii) পৃষ্ঠা ৩০৬ ১৯৬২ সালে সাহিত্য মজলিশ গড়ে ওঠেনি, ওটা ১৯৬৩ সাল হবে। হবে। iii) পৃষ্ঠা ৩০৬ অরুণাচল বসুর মৃত্যুর পরে নতুন সংস্কৃতি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারল না কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়; দক্ষ সংগঠকের অভাব থাকলেও ১৯৮৫ সাল অবধি বর্ধমানে সাহিত্য বিভাগের কিছু কার্যকলাপ জারি ছিল।ব্যক্তিগত উদ্দোগে শ্রী অনিলেন্দু ভট্টাচার্য অভিজ্ঞান পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন, যার শেষ সংখ্যাটা প্রকাশিত হয়েছিল সেপ্টেম্বর ২০০২-এ। আবার, নতুন সংস্কৃতির ব্যানারে না হলেও ব্যক্তিগত উদ্দোগে সংগীত বিভাগের অনেকগুলি গান রেকর্ড হয়েছে বা এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শোনা যায়। iv) পৃষ্ঠা ৩০৬ শুধু মুখর পত্রিকাই অরুণাচল বসু সংখ্যা প্রকাশ করেনি, এপ্রিল ২০০৪-এ মানবমনঅক্টোবর ২০১৪ তে কবিওয়ালা পত্রিকাও অরুণাচল বসু সংখ্যা প্রকাশ করে। v) পৃষ্ঠা ৩০৭ অরুণাচল বসুকে নিয়ে আরো দু-টি লেখার সন্ধান পাওয়া গেছে; তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই ৩০ জুলাই ১৯৭৫-এ 'সত্যযুগ' পত্রিকায় স্মৃতিচারণা করেন শ্রী বৈকুণ্ঠ সরকার এবং ৩ অগাস্ট ১৯৭৫-এ কালান্তর পত্রিকায় স্মৃতিচারণা করেন শ্রী বিতোষ আচার্য । vi) পৃষ্ঠা ৩০৭ প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থটির নাম ফুটবলের কলাকৌশল, ফুটবল খেলার আইন কানুন নয়। এটি যৌথ ভাবে শ্রী রথীন্দ্র সরকারের সাথে অনূদিত এবং প্রকাশকাল ১৯৫৮। শ্রী সোমনাথ দাশগুপ্তের আনুকূল্যে এটি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।


সমালোচনা

এপ্রিল ২০০৪-এরমানবমন পত্রিকার ৩২ পৃষ্ঠায় (অক্টোবর ২০১৪-রকবিওয়ালা পত্রিকার ৯৮ পৃষ্ঠায়) নতুন সংস্কৃতির আধুনিক বাংলা কবিতার সংগীতরূপের জন্য অরুণাচলের বাছাই করা কবিতার কিছু সাধারণ বৈশিষ্টের কথা লেখা আছে। কিছু গানের ক্ষেত্রে এটা হয়ত সত্যি, কিন্তু যেহেতু বাছাইটাকে একটি সাধারণ রূপ দেওয়া হয়েছে, তাই এই বক্তব্যের কিছু পরিশোধনের প্রয়োজনীয়তা আছে। যেহেতু নতুন সংস্কৃতি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম ছিল, তাই এর প্রেক্ষিৎ, মতাদর্শ, মানুষের গ্রহণযোগ্যতা এবং অনুভবের দিকটাও লেখকের দেখা উচিৎ ছিল বলে মনে হয়। কিছু কিছু কবিতার গীতিময়তা এককথায় অসাধারণ এবং অনন্য ছিল; যেমন সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের পিঙ্গল বিহ্বল ব্যথিত নভতল, বিষ্ণু দে-র কোথায় যাবে তুমি সুকান্ত ভট্টাচার্যের এখানে বৃষ্টিমুখর লাজুক গাঁয়ে, অরুণাচল বসুর রূপ সমুদ্দুর টলমল টলমল, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ছুটির পড়ার চৌকাঠে কে, প্রভৃতি। পাঠক / শ্রোতারা নতুন সংস্কৃতি সংগীত বিভাগ-এ রাখা গানগুলি শুনলে এর কিছুটা আভাস পেতে পারেন। এটা অবশ্য করেই বলা যায় যে, নতুন সংস্কৃতির এই গানগুলির প্রয়োজনীয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা আজও সমান ভাবেই রয়েছে; শুধু পরিবেশনটা ঠিক ভাবে করা দরকার তাই আমরা এর দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারিনা। এ প্রসঙ্গে জানানো প্রয়োজন যে, আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শ্রীমতী পূরবী মুখোপাধ্যায় নতুন সংস্কৃতির গান পরিবেশন করে থাকেন।




বিবিধ তথ্য

  • একটি নোটে দেখা যায় যে ১৩৫০ সালের ১লা বৈশাখ (১৫ এপ্রিল ১৯৪৩) কবি অভিযান নাটকে অভিনয় করেছিলেন এবং সেই অভিনয়ের ছবি ২১ এপ্রিল ১৯৪৩-এ জনযুদ্ধ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।
  • কবির লেখা গানের রেকর্ডের কথা যা জানা গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে তাঁর বিভিন্ন গান বিভিন্ন সময়ে রেকর্ড করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, পূরবী মুখোপাধ্যায় ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়।
  • সুকান্ত বিষয়ে ভ্রান্ত তথ্য, তথ্য বিকৃতি, অন্যান্য ভুল-ত্রুটি ও প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি নামে একটি অপ্রকাশিত লেখা রয়ে গেল, যা ভবিষ্যতে এই ব্লগে বা কোনো বইয়ে প্রকাশ করার ইচ্ছা রইল। (১৬ মার্চ ২০১৭ তারিখে অসম্পাদিত এই লেখাটি ব্লগে প্রকাশ করা হ'ল। রচনায় উল্লিখিত বিভিন্ন বইয়ের পৃষ্ঠার ক্রমিক সংখ্যার সঙ্গে বর্তমানে প্রাপ্তব্য বইয়ের অন্যান্য সংস্করণ বা পুনর্মুদ্রণের পৃষ্ঠার ক্রমিক সংখ্যার মিল না-ও পাওয়া যেতে পারে।)
  • স্বল্পপরিচিত ও অগ্রন্থিত রচনা বিভাগে বেশ কিছু কবিতার পাণ্ডুলিপি দেওয়া হল কবির সামগ্রিক কবিসত্বার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। হয়ত অল্প বয়সের রচনাগুলি বা আরো বেশ কিছু কবিতা কবির বাছাইয়ে স্থান পেত না, কিন্তু ইতিহাসের স্বার্থে প্রায় সব কবিতাই এখানে দেওয়া হল। এর মধ্যে অল্প কিছু কবিতাই হয়ত আগে প্রকাশিত হয়ে থাকতে পারে।
  • কবির সংগৃহীত বিভিন্ন মনীষীর বাণী (কোটেশন) ও বেশ কিছু দেশি-বিদেশি ছবির প্রতিলিপি এই ব্লগে দেওয়া হ'ল। পাঠকের ভাল লাগলে বা কোন কাজে লাগলে এই প্রচেষ্টা সার্থক বলে মনে হবে 

No comments:

Post a Comment