নতুন সংস্কৃতি - সংগীত বিভাগ

 গান | অন্যান্য



     বাংলা গান চিরকাল সাহিত্য-নির্ভর সেই রামায়ণী গান থেকে যার শুরু; আর, এর চূড়ান্ত উদাহরণ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। স্মরণ করা উচিৎ, যে-গ্রন্থের জন্য তাঁর বিশ্বপরিচিতি সেই গীতাঞ্জলী আসলে একটি গানের বই। এবং তার সুর শুনে নয়, তার সাহিত্য মূল্যের জন্যেই বিদেশী বিদগ্ধজনের কাছে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিত্বের পুরস্কার লাভ। এই সাহিত্য-ভিত্তিক সংগীত-ধারার সবথেকে বৈপ্লবিক বিকাশ বোধকরি শ্রী সলিল চৌধুরীর হাত ধরে। তাঁর সুরে পালকির গান, রানার, অবাক পৃথিবী, তেলের শিশি ভাঙলো বলে, উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা, প্রভৃতি গান চিরকালীন হয়ে দুই বাংলায় বিরাজ করছে। নতুন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান আধুনিক বাংলা কবিতার সংগীতরূপ এই অতীত ঐতিহ্যেরই সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধির বিনীত প্রয়াস।
নতুন সংস্কৃতি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম। শিল্প-সাহিত্য-সংগীতের মধ্য দিয়ে জনমানসে মানবিকতা ও সুস্থতার সুপ্রভাবসৃষ্টিই এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল। গুণীজনেরা বলেছিলেন আমরা এদের গানে সৃষ্টিশীল আধুনিকতার ঔজ্জ্বল্য ও গভীরতা লক্ষ করেছি। মূল কবিতার ভাব অক্ষুণ্ণ রেখে বা তার যথোচিত উন্মোচন ঘটিয়ে সংগীতে এঁরা এক যথার্থ নতুনত্বের স্বাদ এনে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
আধুনিক বাংলা কবিতার সংগীতরূপ-এর পাশাপাশি নতুন সংস্কৃতির অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলি ছিল আধুনিক বাংলা কবিতা অবলম্বনে একালের ঋতুরঙ্গ ছয় ঋতুর আদলে, লেনিন গীতি আলেখ্য, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যনাট্য একলব্য, প্রভৃতি।
নতুন সংস্কৃতির  একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চলে ৮ জুন ১৯৬৮ সাল থেকে ১৮ অগাস্ট ১৯৭৩ সালের মধ্যে মোট ২৭ টি অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় তখনকার জনমানসে নতুন সংস্কৃতি কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল।

No comments:

Post a Comment